Breaking News
Loading...
Sunday, April 10, 2011

মুনাফিকির করুণ পরিণতি

12:17 PM
মুনাফিক আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ভণ্ড, কপট বা দুই মুখো। ইংরেজিতে বলে Hypocrite (হিপোক্রিট)। ইসলামের প্রতি প্রকাশ্যে আনুগত্য ও অন্তরে ঘৃণা করার নাম মুনাফিক। এটা কুফরির চেয়েও খারাপ ও জঘন্য চারিত্রিক অধঃপতন।
‘মুনাফিকুন’ শব্দটি ‘নিফাকুন’ শব্দ থেকে এসেছে। আর নিফাকের অর্থ হলো, দুইমুখো নীতি অবলম্বন করা, কুফরি গোপন করে নিজেকে মুমিন বলে প্রকাশ করা।
সমাজে এমন অনেক লোক দেখতে পাবেন, যারা সামান্য কিছু স্বার্থের জন্য বন্ধুবেশে শত্রুতা করে থাকে। এরা উপরে উপরে ভালো মানুষ সেজে মৌখিক বন্ধুত্ব দেখায়, কিন্তু অন্তরে থাকে এদের ভীষণ শত্রুতা। এরা কপটচারী, বন্ধুবেশে শত্রু; বরং শত্রুর চেয়েও ভয়ানক। কাফির ও অমুসলিমদের মধ্য থেকে কোনো কোনো লোক ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণের ভান করে ইসলাম ও মুসলমানদের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। এ ধরনের দ্বিমুখী কার্যক্রমের নামই নিফাক। বাংলায় আমরা বলি ভণ্ডামি বা কপটতা।
মহান আল্লাহতাআলা নবী করিম সাঃ-কে বলেন, ‘হে নবী সাঃ! আপনি কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদে নেমে পড়ুন। আর তাদের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করুন।’ (সূরা তওবা-আয়াত-৯)
যারা এ আচরণ করে তথা মুখে ইসলাম ও ঈমানের দাবি করে এবং অন্তরে এর বিরোধিতা করে ও একে অস্বীকার ও বিরোধিতা করে তারা হলো মুনাফিক।
মুনাফিকদের বিরুদ্ধেও কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। আর মুনাফিকরা নবী সাঃ-এর উম্মতেরই পরিচয়দানকারী একটি দল। বাইরে তাদের খাঁটি মুসলমান, নবীদরদি ও ইসলামদরদি বলে মনে হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ওরা দীনের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে।
মহান আল্লাহ তায়াআলা বলেন, হে নবী সাঃ আপনি তাদের মুনাফিকির জন্য আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর না-ই করুন, তাদের জন্য উভয়ই সমান। আল্লাহ তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না।
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এমন পাপাচারী লোকদের হিদায়াত দান করেন না।’ (সূরা মুনাফিকুন - আয়াত - ৬৩)
যারা ইসলামের বিরোধিতা করে তাদের মধ্যে মুনাফিকরা জঘন্যতম। তারা কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট। তারা মুখে ইসলামের ভালোবাসার জয়গান গায় এবং অন্তরে ইসলামকে ঘৃণা করে। তারা প্রকাশ্যে মুসলমান ও ইসলামের বন্ধু সাজে কিন্তু অন্তরে ভীষণ শত্রুতা পোষণ করে। মুনাফিকরা বৈষয়িক সুবিধা লাভ করার উদ্দেশে প্রকাশ্যে ইসলামের হিতাকাঙ্ক্ষী সাজে কিন্তু সুবিধা লাভের পর ইসলামের শত্রুতা আরম্ভ করে, তারা হলো দুই মুখো সাপ। এরা ইসলামের শত্রুদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে। মুসলমানদের দুর্বলতা ও গোপনীয়তা শত্রুদের কাছে পাচার করে। নানা মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে মুসলমানদের সামাজিক ঐক্যে ফাটল ধরায়। এরা সাধারণ মুসলমানদের সমর্থন লাভ করার জন্য ইসলামের কথা বলে। ইসলামী লেবাস ধারণ করে। কিন্তু সমর্থন লাভ করার পর নেতৃত্ব পেয়ে ইসলাম ও কুরআনের বিধানের চরম বিরোধিতা করে। মুসলমানদের স্বার্থের বিরুদ্ধাচরণ করে। ইসলামী লেবাস পরিহার করে এবং প্রকৃত রূপ ধারণ করে। এরা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয়। স্বার্থ অর্জনের জন্য তারা যেকোনো ধরনের মিথ্যা বলতে দ্বিধা করে না। পবিত্র কুরআন শরিফে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।’ (সূরা মুনাফিকুন - আয়াত - ১)

মুনাফিকরা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য একবার মুসলমানদের দলে আবার কাফিরদের দলে যোগদান করে। তাই মহান আল্লাহ বলেন, তারা কোনো দলেই স্থির থাকে না। না এ দলে, না অন্য দলে অর্থাৎ না মুসলমানদের দলে না কাফিরদের দলে।’ (সূরা নিসা - আয়াত - ১৪৩)
মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি
(১) যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে।
(২) যখন অঙ্গীকার করে, তখন তা ভঙ্গ করে
(৩) তার কাছে কোনো আমানত রাখা হলে তা সে খেয়ানত করে।
মুনাফিকরা ইসলামের প্রধান শত্রু। ইসলামের ক্ষতি করার ব্যাপারে তারা কাফিরদের চেয়েও ভয়ানক। মদিনার মুনাফিকরা মুসলমানদের চরম ক্ষতি করেছিল। এদের নেতার নাম ছিল আবদুল্লাহ বিন উবাই। সে মহানবী সাঃ-কে সব সময় বিব্রত করার অপচেষ্টা চালাত।
মুনাফিকরা অন্যের সাথে প্রতারণা করে, তারা সব সময় সন্দেহ রোগে আক্রান্ত এবং নিজেদের পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবী মনে করে, কিন্তু বাস্তবে অজ্ঞ, মূর্খ ও নির্বোধ। তারা দ্বিমুখী স্বভাবের সাহায্যে মুসলমানদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তারা ভালো কথা শুনতে চায় না, ভালো কথা বলতে চায় না, ভালো কাজ দেখতে চায় না। সব সময় তারা গোপন কর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভীত থাকে। এরা মিথ্যাবাদী, ইসলামকে তারা ঢালস্বরূপ ব্যবহার করে। বিদ্যা, বুদ্ধি, মেধা, শক্তি ও সম্পদের অহঙ্কার করে। এরা নামাজ পালনের ক্ষেত্রে অলস। লোক দেখানোর জন্য রোজা রাখে, হজ করে, কুরআন তিলাওয়াত করে, দানখয়রাত করে এবং আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলো পালন করবে। কিন্তু এগুলোর সাথে সাথে তারা মিথ্যা বলবে, ভণ্ডামি করবে, জুলুম করবে, ওয়াদা খেলাফত করবে ও আমানতের খেয়ানত করবে। কোনো হারাম হালাল বিচার করবে না। সুদ-ঘুষ গ্রহণ করে। দুনিয়ার সুখশান্তির জন্য তারা সবই করতে পারে। বাহ্যিক লেবাসে তারা মুসলিমের দাবিদার।
মুনাফিক দুই প্রকারঃ
(১) ঈমান ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মুনাফিক
(২) আমল ও কর্মের ক্ষেত্রে মুনাফিক।
নিজেদের অপরাধ ধরা পড়ার ভয়ে মুনাফিকরা সর্বদা ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। ধরা পড়লে ইহকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করে এবং পরকালে শাস্তি হিসেবে জাহান্নামের গভীরতম স্থানে অবস্থান করবে। মহান আল্লাহতাআলা পবিত্র কুরআনে তাদের শাস্তি ও অবস্থান সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে।’ (সূরা নিসাঃ আয়াত -১৪৫)
মুনাফিকদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘অভিশপ্ত অবস্থায় তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে ধরা হবে এবং হত্যা করা হবে।’ (সূরা আহযাবঃ আয়াত - ৬১)

আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘হে নবী! কাফির ও মোনাফিকদের সাথে যুদ্ধ করো এবং কঠোরতা প্রয়োগ করো। তাদের আবাস জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত খারাপ স্থান।’ ঈমানের ক্ষেত্রে মুনাফিকি এত জঘন্য ও ভয়ানক যে, তাদের জন্য কেউ যদি ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না।
আখিরাতে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। অপর একটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মুনাফিকের আর একটি চিহ্ন আছে তা হলো যখন সে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তখন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।’
যারা মুখে ইসলাম ও ঈমানের দাবি করে, কিন্তু অন্তরে ইসলামকে ঘৃণা করে এবং আল্লাহ ও রাসূলকে বিশ্বাস করে না তারা হলো মুনাফিক। এরা মিথ্যাবাদী, প্রতারক, ভণ্ড ও দ্বিমুখী নীতি অবলম্বনকারী, যার মধ্যে এ বদ অভ্যাস সব থাকবে। এরা নিকৃষ্ট, জঘন্য, কপট, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। আল্লাহ কখনো তাদের ক্ষমা করবেন না। তাই আমরা কেউ যেন কারো সাথে মুনাফিকি আচরণ না করি এবং ঈমানের সাথে চলতে পারি।
**************************
মাসুদা বেগম
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৮ জুলাই ২০০৮

0 comments:

Post a Comment

 
Toggle Footer