Breaking News
Loading...
Sunday, April 10, 2011

মহিলাদের জামাতে সালাত

12:12 PM
জামাতের সাথে সালাত আদায়ের জন্য মহিলাদের মসজিদে উপস্থিতির বিষয়টি তর্কাতীত নয়। এ বিতর্কটি খোদ সাহাবায়ে কিরাম রাঃ-এর যুগ থেকে চলে আসছে। এখনো মতানৈক্য চলছে। কিন্তু মহিলারা জামাতে সালাত আদায় করতে পারবেন না বা তারা যদি জামাতে সালাত আদায় করেন তাহলে সেটি শুদ্ধ হবে না­ এমন কথা কেউ বলেননি। কারণ অনেক মহিলা সাহাবি খোদ রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর সাথে জামাতে সালাত আদায় করেছেন বলে বহু হাদিসে বর্ণিত আছে।
জামাতে উপস্থিত সব শ্রেণীর মুসল্লিদের কাতার কিভাবে হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে হাদিস ও ফিকহের গ্রন্থাবলিতে বিশদ আলোচনা রয়েছে। মহিলাদের পর্দা রক্ষার্থে তাদের কাতার সবার পেছনে রাখা হয়েছে। ফরজ সালাত শেষে ঘরে ফেরার সময় যাতে মহিলাদের মুখোমুখি না হতে হয় সে জন্য পুরুষদের একটু বিলম্বে বের হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ কথাগুলো প্রমাণ করে যে, মহিলারা জামাতে সালাত আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর যুগে মহিলারা যে জামাতে সালাত আদায় করতেন, এ ব্যাপারেও কোনো এখতেলাফ নেই। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমরা আল্লাহর বাঁদিদের মসজিদে আগমন করা হতে বাধা দিয়ো না (বুখারি শরিফ প্রথম খণ্ড ও মুসলিম শরিফ প্রথম খণ্ড)। ঈদের জামাতে মহিলাদের উপস্থিতিকে রাসূলুল্লাহ সাঃ খুবই উৎসাহিত করতেন। কারো পর্দার জন্য জিলবাব বা গাউন না থাকলে অন্যেরটি পরেও উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিতেন। এমনকি ঋতুবতী মহিলা যারা সালাত আদায়ের অনুপযুক্ত তাদেরও ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে খুতবা ও দোয়ায় শরিক হওয়ার কথা বলতেন (বুখারি শরিফ প্রথম খণ্ড ১৩৩, মুসলিম শরিফ প্রথম খণ্ড ২৯০)। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, মহিলারা সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যাবে না। (মুসলিম শরিফ প্রথম খণ্ড ১৮৩)।
এই হাদিস এবং এ ধরনের হাদিসগুলোর আলোকে ইমাম নাওয়ারি বলেন, মহিলাদের মসজিদে যেতে বাধা দেয়া যাবে না। তবে এ ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরাম কিছু শর্ত আরোপ করেছেন। তা হলো মহিলা কোনো ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যাবে না, সাজগোজ করে নয়, এমন কঙ্কন পরে নয়, যা থেকে ধ্বনির সৃষ্টি হয়। পুরুষদের সাথে মিলেমিশে মসজিদে উপস্থিতি নয় বা এ ধরনের যেকোনো আচরণ যা ইসলামি শালীনতা ও সংস্কৃতির পরিপন্থী হয়। (সহি মুসলিম প্রথম খণ্ড ১৮৩)।
সার্বিক আলোচনা থেকে যা বেরিয়ে আসে তা হলো আমরা যেভাবে মহিলাদের মসজিদের ধারে কাছে যেতে দিই না, তা হাদিসের আলোকে যথার্থ নয়। আবদুল্লাহ ইবন উমার রাঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর হাদিস বর্ণনা করছিলেন যে, মহিলাদেরকে রাতে মসজিদে যেতে দিয়ো। তাঁর এক ছেলে বেলাল তখন বলে উঠল, আমি যেতে দেব না। আবদুল্লাহ রাঃ তখন তার বুকে আঘাত করে বললেন, আমি বর্ণনা করছি­ রাসূলল্লাহ সাঃ বাধা না দিতে বলেছেন আর তুমি বলো বাধা দেবে (মুসলিম প্রাগুক্ত)। মহিলাদের মসজিদে যাওয়া না যাওয়ার বিতর্ক হতে যে বিষয়টি বের হয়ে আসে তাহলো জামাতে তাদের সালাত আদায় করার অবকাশ রয়েছে। হয়তো স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এতে দ্বিমতেরও অবকাশ রয়েছে। মা আয়েশা রাঃ নিজেই রাসূল্লাহ সাঃ-এর সাথে মসজিদে জামাতে সালাত আদায় করতেন। ফজরের ওয়াক্ত সম্পর্কে তিনি বর্ণনা করেছেন, মুমিন মহিলারা রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর সাথে ফজরের সালাত এমন সময় আদায় করে ঘরে ফিরতেন অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না (বুখারি শরিফ প্রথম খণ্ড ১২০, মুসলিম শরিফ প্রথম খণ্ড ২৩০)। এই আয়েশা রাঃ শেষ জীবনে মহিলাদের চাল-চলনের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ মহিলাদের এখনকার অবস্থা দেখলে তাদের মসজিদে আসা থেকে নিষেধ করতেন। (সহিহ মুসলিম প্রথম খণ্ড ১৮৩)। এ থেকে বুঝা যায়, তার এ অভিমতটি ছিল কালের সাথে সম্পর্কিত। এ যুগে মহিলারা অফিস করছেন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় যাচ্ছেন, স্বামীর সাথে বাজার করছেন। সালাতের সময় হলে তারা তা আদায় করবেন কোথায়। তাদের জন্য মসজিদে উপস্থিত হয়ে সালাত আদায় করলে অন্যায় হবে? বয়স্ক মহিলারা মসজিদে উপস্থিত হয়ে ওয়াজ-নসিহত ও খুতবা শুনলে ভালো ছাড়া মন্দ কোথায়? মসজিদে মহিলাদের স্বতন্ত্র সালাতের স্থান থাকলে এবং পুরুষরা রাস্তায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে জামাতে সালাতই তো উত্তম হয়।
শত শত এমনকি হাজার হাজার মহিলা মাদ্রাসা, কলেজ ও ভার্সিটির হলে বাস করছেন। তারা যদি নির্দিষ্ট সময়ে এক সাথে জামাতে সালাত আদায় করেন তাহলে তাদের জীবনে নিয়মানুবর্তিতা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। অফিসের মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জামাতে সালাতের আওতায় আনা যায় তাহলে নামাজির সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবে না। জামাতে সালাত এমন একটি পন্থা যা মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। কোনো কোনো কল-কারখানায় দেখা যায় পুরুষদের জন্য জামাতে সালাতের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মহিলাদের একত্রিত করে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা নেই। এটি হওয়া উচিত নয়। কোনো কোনো হাদিসে বর্ণিত আছে, মহিলাদের জন্য উত্তম হলো­ তাদের গৃহে সালাত আদায় করা। এটি সেইসব মহিলার জন্য প্রযোজ্য, যারা নিজ বাসগৃহের বাইরে আসেন না বা তাদের আসার প্রয়োজন হয় না। জাগতিক শিক্ষার এই চরম উৎকর্ষতার যুগে মহিলাদের ইসলামের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করা ইসলামি ধ্যান-ধারণার প্রতি উজ্জীবিত করা উলামায়ে কেরামের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে অগ্রসর হওয়া সমাজ আশা করে।

**************************
ফয়সল আহমদ জামালী
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৫ আগষ্ট ২০০৮

0 comments:

Post a Comment

 
Toggle Footer