Breaking News
Loading...
Saturday, April 9, 2011

ইসলামের নির্দেশনাঃ পিতা-মাতার প্রতি

3:43 PM
পিতা-মাতার মতো এই পৃথিবীতে আপনজন আর কেউই নেই। পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পর পিতামাতাই সন্তানের কাছে অধিক শ্রদ্ধেয়। মহান স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করেছেন সীমাহীন অনুগ্রহ ও দয়া দিয়ে। তাই আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা এবং তাঁর ইবাদত করা। এরপর যাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করা উচিত তারা হলেন পিতা-মাতা।
তাদের কারণেই আমরা এই পৃথিবীর মুখ দেখতে পেরেছি। একথা অনস্বীকার্য, শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সন্তান যতই বৃদ্ধ হোক না কেন পিতা-মাতার কাছে সন্তান সর্বদা শিশুর মতো। আজন্ম সন্তান পিতা-মাতার কাছে স্নেহ, আদর আর দয়া-মায়াতেই লালিত-পালিত হয়। পিতা-মাতা কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না। পিতা-মাতা শত দুঃখ-কষ্ট পেলেও সন্তানের জন্য সর্বদা শুভ কামনা করেন। দোয়া করেন।
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ভালোবাসা যতই আত্মিক হোক না কেন, জনক-জননী হিসেবে পিতা-মাতার অধিকার ও তাদের প্রতি সন্তানের কর্তব্য পালনে যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পরবর্তী জীবনে এই দায়িত্বের কারণেই সন্তানের ওপর পিতা-মাতার অধিকার আরো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মগতভাবে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার যে অধিকার রয়েছে তা কিন্তু অনেকের কাছ থেকে আদায় করা যায় না। কেবল সন্তানই পিতা-মাতার প্রতি তার কর্তব্য পালন করে পিতা-মাতার অধিকারকে অক্ষুণ্ন রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সন্তানের দায়িত্বই মুলত মুখ্য বিষয়। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আল্লাহপাক কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেছেন-তোমরা তাঁকে ছাড়া কারো ইবাদত-বন্দেগি করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি চরম আদর ও সদ্ব্যবহার করবে। যদি তাদের একজন অথবা উভয়েই বার্ধক্যে উপনীত হন তবে মনে রেখ, তুমি তাদের প্রতি কোনোরুপ উহ্ শব্দটি বলার কারণ ঘটাবে না অর্থাৎ তাদের অন্তরে কোনো কষ্ট বা চোট লাগে এমন ব্যবহার করবে না। পিতা-মাতার সঙ্গে মিষ্টিমধুর সদালাপ কর। তাদের সামনে বড়ত্ব বা কেদদারি ভাব প্রদর্শন করবে না। তারা যেমনি অতি আদর-স্নেহে-যত্মে লালন-পালন করেছেন, তোমরা তাদের প্রতি তেমনিভাবে সদয় হও।
জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে পিতা-মাতার নির্দেশ মান্য করা সন্তানের কর্তব্য। কিন্তু পিতা-মাতা যদি ইসলামবিরোধী কাজ করতে নির্দেশ দেয় বা চাপ প্রয়োগ করে, সেক্ষেত্রে পিতামাতার আল্লাহদ্রোহী আদেশ অমান্য করার জন্য আল্লাহপাকের নির্দেশ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সন্তান পিতা-মাতাকে ত্যাগ করতে পারবে না বা তাদের সঙ্গে কোনোরুপ দুর্বøবহার করা যাবে না। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-‘ওয়া ইন জাহাদাকা আলা আনতুশরিক বি মা লাইসা লাকা বিহি ইলমুন ওয়া ছাহিবহুমা ফিদ্দুনিয়া মারুফান ওয়াত্তাবি সাবিলা মান আনাবা ইলাইয়্যা। অর্থাৎ যদি পিতা-মাতা তোমার ওপর চাপ প্রয়োগ করেন আমার সঙ্গে শরিক করার জন্য যা তোমার বোধগম্য নয়, তাহলে তাদের কথা মেনে নিও না। আর পার্থিব জীবনে উৎকৃষ্ট পন্হায় তাদের সঙ্গে সৎ সম্পর্ক বজায় রেখ। আর তুমি তাদের পথ অনুসরণ করো না।
একবার এক ব্যক্তি আমাদের প্রিয় নবী হজরত রাসুলে করিমের (সা.) খেদমতে এসে আরজ করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.)! আমার পিতা-মাতার ইন্তেকাল হয়েছে, তাদের জন্য আমার কি কি হক পালনীয়? হজরত রাসুলে পাক (সা.) বলেনঃ নামাজ আদায় করে গুনাহখাতা মাফির জন্য আল্লাহ রাহমানুর রাহিমের দরবারে ক্ষমা ফরিয়াদ করো এবং তাদের কোনোখানে কোনো ওয়াদা থাকলে তাও যথাযথ পালন করো।

আরেকবার কোনো এক ব্যক্তি হজরত রাসুলে মকবুলকে (সা.) প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.)! আমি কার সঙ্গে আদব রক্ষা করব, সদ্ব্যবহার করব। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাৎক্ষণিক বলে দিলেন, তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে। লোকটি আবার বলল, তারা তো ইন্তেকাল করেছেন। হুজুরে আকরাম (সা.) জবাবে বললেন, তার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা অনেক সময় লক্ষ্য করি কোনো কোনো সন্তান পিতা-মাতাকে অবজ্ঞা, অবহেলা ও ঘৃণার চোখে দেখে এবং তাচ্ছিল্য করে। এটা আদৌ ন্যায়সঙ্গত নয়। যা ধর্ম ও সমাজের নীতিমালার ঘোর পরিপন্হী। সন্তানের কাছে পিতা-মাতার সম্মান বা কদর সম্পর্কে আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন-জেনে রাখো, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তিনি আরো বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি। পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহপাকের অসন্তুষ্টি। অতএব, দুনিয়ার জীবনে এবং পরকালে বেহেশত পেতে হলে অবশ্য অবশ্যই পিতা-মাতার প্রতি সেবা-যত্ম, সম্মান-সেবা-যত্ম-সম্মান ও আনুগত্য থাকতে হবে। সর্বোপরি স্মরণ ও বরণ করে নিতে হবে-পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য অপরিসীম। আল্লাহপাক যেন আমাদের পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যথাযথ সচেষ্ট হওয়ার তওফিক দিন।

**************************
মা ও লা না শা হ আ ব দু স সা ত্তা র
আমার দেশ, ২৪ মে ২০০৮

0 comments:

Post a Comment

 
Toggle Footer